Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

প্রতিদিনের আমে লুকিয়ে আছে কিছু ঝুঁকি? পুষ্টিবিদদের মতামত নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন

 প্রতিদিন আম খাওয়া কি উচিত? পুষ্টিবিদদের মতামত নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন


কলকাতা, ১২ জুন ২০২৫:গরমের তীব্র দাপটে রসালো, সুগন্ধি আমের স্বাদ নেওয়ার মৌসুম পুরোদমে চলছে। হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ – রাস্তার ধারে দোকান থেকে শুরু করে বাজার, সর্বত্র আমের সমারোহ। এই সময়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, প্রতিদিন আম খাওয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, নাকি ক্ষতিকর?" পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের মতামত নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন।



আমের গুণাগুণ: ভিটামিন ও খনিজের ভাণ্ডার


পুষ্টিবিদরা একবাক্যে স্বীকার করেন আমকে "ফলের রাজা" বলার যথার্থতা। আমে রয়েছে:


ভিটামিন সি ও এ-র প্রাচুর্য: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে, কোষের ক্ষতি রোধ করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

আঁশ (ফাইবার):হজমশক্তি উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

পটাশিয়াম:রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

ফোলেট: বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



 তবে, প্রতিদিনের আমে লুকিয়ে আছে কিছু ঝুঁকিও


যদিও আম পুষ্টিতে ভরপুর, পুষ্টিবিদ ডা. অরিন্দম সিনহা সতর্ক করেছেন: **"আম মিষ্টি ফল হওয়ায় এতে প্রাকৃতিক শর্করার (ফ্রুক্টোজ) পরিমাণ অনেক বেশি। প্রতিদিন অতিরিক্ত আম খাওয়া বেশ কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে।



1. ওজন বৃদ্ধি ও রক্তে শর্করার মাত্রা: একটি মাঝারি আকৃতির আমে প্রায় ৪৫ গ্রাম চিনি থাকে। প্রতিদিন অতিরিক্ত আম খেলে ক্যালোরি ইনটেক বেড়ে ওজন বাড়তে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে।

2. হজমের সমস্যা আমে প্রচুর আঁশ থাকলেও, হঠাৎ করে বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, এমনকি ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যাদের পাকস্থলী সংবেদনশীল।

3. অ্যালার্জির সম্ভাবনা: কিছু মানুষের আমের খোসা বা রসে সংস্পর্শে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া (চুলকানি, ফুসকুড়ি) হতে পারে।

4. ক্যালোরি কাউন্ট: ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে প্রতিদিন একাধিক আম খাওয়া ক্যালোরি কাউন্টে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।


 তাহলে উপায় কী? পুষ্টিবিদদের পরামর্শ


পুষ্টিবিদদের মূলমন্ত্র হল "পরিমিতি ও ভারসাম্য। তাদের পরামর্শ:


পরিমিত পরিমাণ:প্রতিদিন এক থেকে দেড় কাপ (প্রায় ১৫০ গ্রাম) কাটা আম খাওয়া যেতে পারে। একটি ছোট বা মাঝারি আমের প্রায় অর্ধেক অংশ।

ডায়াবেটিস রোগীরা সতর্কতা: ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। সাধারণত খুব অল্প পরিমাণে (২-৩ টুকরো) খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং রক্তে শর্করা মেপে দেখা জরুরি। টক জাতীয় আম (কাঁচা আম) তুলনামূলকভাবে ভালো অপশন হতে পারে।

সময়: বিকেলের নাস্তায় বা খাবারের মাঝে আম খাওয়া ভালো। খালি পেটে বা রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে না খাওয়াই উত্তম।

সমগ্র ফল: আমের রসের চেয়ে কাটা আম খাওয়া ভালো, কারণ রসে আঁশ কমে যায় এবং চিনি ঘনীভূত হয়।

শরীরের সংকেত শুনুন: কারো কারো পেটে আম সহ্য নাও হতে পারে। নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন।


উপসংহার: মৌসুমের স্বাদ উপভোগ করুন, তবে জেনেশুনে


আম বাঙালির রসনাতৃপ্তির অন্যতম অনুসঙ্গ, যা পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। তবে, "অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়" - এই কথাটি আমের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ হল, মৌসুমের এই রসালো ফলটি উপভোগ করুন, কিন্তু পরিমিত পরিমাণে এবং সচেতনভাবে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য বা হজমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এভাবেই আমের স্বাদ নেওয়া হবে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ।


সংবাদ সংস্থা: Spotmarknews 

লেখক: অভিজিৎ বোস 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ