Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করেছিলেন ! যিনি ১৯৪৬ সালে সরাসরি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে দাঁড়িয়ে একা হাতে

 গোপাল পাঁঠা: এক সাহসী দেশপ্রেমিকের অজানা কাহিনি


✍️ লেখক: Avijit Bose 


"গোপাল পাঁঠা" নামটি শুনলে আজও অনেকের মনে পড়ে একটি বিশেষ ঘটনার কথা—যেখানে সাহস, কৌশল আর দেশপ্রেম এক সঙ্গে মিলেমিশে এক অনন্য ইতিহাস রচনা করেছিল। এই "গোপাল পাঁঠা" আসলে গোপাল চন্দ্র মুখার্জি নামে এক বাঙালি যুবক, যিনি ১৯৪৬ সালে সরাসরি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে দাঁড়িয়ে একা হাতে হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর কাহিনি বাংলার ইতিহাসে আজও অনুপ্রেরণার উৎস।


🔥 ১৯৪৬ সালের প্রেক্ষাপট:

ব্রিটিশ ভারত তখন স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সেই সময় কলকাতা সহ বহু জায়গায় শুরু হয়েছিল ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ১৯৪৬ সালের ১৬ অগস্ট ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’-তে মুসলিম লীগ কলকাতায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, যার ফলস্বরূপ শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। এই দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। হিন্দু সমাজের মধ্যে চরম আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়।



Scale Of Death:- The riots were widespread and resulted in an estimated 5,000 to 10,000 deaths and about 15,000 injuries.



👤 কে ছিলেন গোপাল পাঁঠা?


গোপাল চন্দ্র মুখার্জি, যিনি "গোপাল পাঁঠা" নামে পরিচিত ছিলেন, কলকাতার বউবাজার অঞ্চলের বাসিন্দা। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘পাঁঠা’ কারণ তিনি কিশোর বয়সে পাঁঠা কেটে বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু তাঁর সাহস ছিল দুর্দান্ত, নেতৃত্বদানের ক্ষমতাও অসাধারণ। তিনি ছিলেন হিন্দু মহাসভা-ঘনিষ্ঠ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মরক্ষার জন্য এক যুব বাহিনী গঠন করেছিলেন।


 ⚔️ হিন্দুদের রক্ষায় আত্মরক্ষা বাহিনী:

ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র সময়, যখন চারদিক থেকে হিন্দু এলাকাগুলি আক্রান্ত হচ্ছিল, তখন পুলিশ বা প্রশাসন প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। তখন গোপাল পাঁঠা নিজে উদ্যোগ নিয়ে যুবকদের সংগঠিত করে আত্মরক্ষা বাহিনী গঠন করেন। তাঁর নেতৃত্বে বহু এলাকা যেমন বউবাজার, কলেজ স্ট্রিট, শ্যামবাজার ইত্যাদি রক্ষা পায়। বলা হয়, তিনি স্থানীয়দের অস্ত্র চালানো শেখাতেন এবং একাধারে রেশন, চিকিৎসা, নিরাপত্তা—সবকিছুর বন্দোবস্ত করতেন।


 🗣️ প্রচার ও প্রভাব:

গোপাল পাঁঠার প্রভাব এতটাই ছিল যে বহু দাঙ্গাবাজ দল তাঁর নাম শুনে এলাকাতে ঢোকার সাহস করত না। তাঁর সংগঠনের তরফে হিন্দুদের মনোবল বাড়াতে দেওয়াল লিখন, মিছিল, এবং রাত্রিকালীন পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এক তরুণ নেতা হিসেবে তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।


🕊️ পরিণতি ও উত্তরাধিকার:

দাঙ্গা শেষ হলে ধীরে ধীরে তাঁর নাম আড়ালে চলে যায়। ভারত স্বাধীন হল, দেশ ভাগ হল, কিন্তু গোপাল চন্দ্র মুখার্জির অবদান ইতিহাসের পাতায় ততটা জায়গা পায়নি। অনেকেই আজও তাঁকে মনে রাখেন একজন লোকনায়ক হিসেবে, যিনি এক সংকটময় সময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাজকে রক্ষা করেছিলেন।

 

গোপাল পাঁঠার জীবন আমাদের শেখায়—আসল নেতৃত্ব আসে সংকটের মুহূর্তে। শুধুমাত্র অস্ত্র নয়, সাহস, মানবতা এবং সংগঠনের শক্তিই পারে একটি সমাজকে রক্ষা করতে। আজ যখন সমাজে আবার বিভেদের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে, তখন গোপাল চন্দ্র মুখার্জির মতো সাহসী মানুষদের কথা আমাদের আরও বেশি করে মনে রাখা দরকার।


গোপাল পাঁঠা শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি এক চলমান অনুপ্রেরণা।

তাঁর স্মৃতির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ